আজকের প্রসঙ্গঃ পাবলিক হেলথে কেন আসবেন না বা আসলে আপনাকে ক্যারিয়ার গড়ার আগে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় ভাবতে হবে। দেশে ও দেশের বাইরেপাবলিক হেলথে কাজের সুযোগগুলো কেমন, কাজের ধরণগুলো কেমন হয়ে থাকে, একজন পাবলিক হেলথ এ্যাক্টিভিস্ট বা স্পেশালিষ্ট হিসেবে কি কি ধরণের কাজ করতে হয়, আর এ পেশায় কি ধরণের দক্ষতা বা যোগ্যতার দরকার হয়? উচ্চ শিক্ষার সুযোগগুলো কেমন? সেই সাথে পাবলিক হেলথ পেশায় কি ধরণের জ্ঞান বা পড়াশোনার দরকার, কিংবা আয় রোজগারের পথগুলো কেমন, সর্বোপরি এই সেক্টরে ক্যারিয়ার পাথটাই বা গ্রাফটা কেমন! সেই সাথে পাবলিক হেলথটাকে আরো ভালো ভাবে বুঝা! পাবলিক হেলথ সেক্টরে কাজের গুরুত্ব বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অবদানের সুযোগগুলো কেমন? বা নিজের ব্র্যান্ড বা ভ্যালু তৈরির প্রক্রিয়াগুলো কি কি…ইত্যাদি।
এ বিষয়ে সিনিয়রেরা আগেও অনেক বার লিখেছেন, তবুও আরেকবার লিখছি। লেখাটা বিশেষত ডাক্তার/মেডিক্যাল কলিগদের জন্য, অন্যদেরও কাজে আসবে বলে আশা করি।
প্রথম কথা হল, পাবলিক হেলথ ক্যারিয়ার আর দশটা ক্যারিয়ারের মতই প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং ক্ষেত্র বিশেষে অধিক প্রতিযোগিতা পূর্ণ। তাই অন্য বিষয় ভালো লাগে না বলে পাবলিক হেলথে আসব সেটা না ভেবে, পাবলিক হেলথ ভালো লাগে কিনা সেটা আগে ভাবুন!
কেন পাবলিক হেলথে আসতে চান?
উচ্চ বেতনের চাকরি (মিথ্যা কথা)
ডিগ্রি করা সহজ (ডাহা মিথ্যা কথা)
গ্ল্যামারাস লাইফ (আরও বড় মিথ্যা কথা)
সত্য কথা হল, এই ফিল্ডে প্রতিযোগিতা আরও কঠিন। ক্যারিয়ারের প্রথম প্রতিযোগিতাটাই শুরু হবে নিজের সাথেই। নতুন নতুন স্কিল অর্জন আর পরিবর্তিত নানা চ্যালেঞ্জের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। চারপাশের মানুষের নাক উঁচু মনোভাব এড়িয়ে চলার চ্যালেঞ্জ।
এর পর আসবে ক্যারিয়ারের মধ্যম স্তর। তখন আসবে আপনার ম্যানেজমেন্ট স্কিল (ডাক্তারির রোগী ম্যানেজমেন্ট স্কিল না, একদম টপ টু বটম ম্যানেজমেন্ট স্কিল, স্টাফ ম্যানেজমেন্ট, অফিস ম্যানেজমেন্ট, ডেটা ম্যানেজমেন্ট, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট, অন্যান্য স্টেক হোল্ডার ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট, নলেজ ম্যানেজমেন্ট- এরকম হাজার ম্যানেজমেন্ট)। বিশ্বাস করুন, ততদিনে পৃথিবীতে অনেক আপডেট এসে যাবে, এবং সে আপডেটের সাথে সাথে নিজেকেও আপডেটেড করা লাগবে।
এরপর আসবে নেতৃত্বের পর্যায়। এই নেতৃত্বের পর্যায়ে আসতে হলে পূর্ববর্তী স্তরগুলোতে আপনার দূর্দান্ত সাফল্যের পাশাপাশি থাকতে হবে উচ্চশিক্ষা (সাধারণত পিএইচডিকে উচ্চশিক্ষা ধরা হয়, তারও আবার জাতের বিচার আছে)। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে উচ্চমাত্রার ডেডিকেশন।
বিশ্বাস করুন, আপনি যে দামি গাড়ি আর বড় বড় সেমিনারে বক্তব্য দেওয়া স্মার্ট ভদ্রলোক/ভদ্রমহিলাকে দেখে পাবলিক হেলথে আসবেন বলে ভাবছেন, তিনিও এই পর্যায় গুলো পার করে এসেছেন এবং আজও প্রথম দিনের মতোই সমান মনোযোগে শিখছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অহংকার শুন্য হয়ে।
যে পরিমান পরিশ্রম করে তিনি আজ অফিসের লোগো লাগানো গাড়িতে চড়ে বেড়ান, তার অর্ধেক পরিশ্রমে ঐ দামের গাড়ি আপনি নিজে কিনে চড়তে পারবেন।
তাহলে কেন এই লোক গুলো এই পথ বেছে নিল?
আমি বলব, লোভে।
হ্যাঁ, লোভই এই পথে তাঁদের চালিত করেছে। সে লোভ হল নিজেকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লোভ, নিজেকে গন্ডিমুক্ত করার লোভ। স্বাস্থ্যের বিরাট সমুদ্রে নৌকা ভাসিয়ে হাবুডুবু করে পাড়ি দেওয়ার বদলে মুক্ত পাখির মত পাখির চোখে সেই সাগরকে দেখার লোভ। এই লোভগুলো ভিন্নমাত্রার লোভ। এই লোভ যাদের মনে থাকে তাঁদের অন্য কোন লোভ আটকাতে পারে না।
গতকাল অফিসে কথা হচ্ছিল কলিগদের সাথে। সেখানে কথা হচ্ছিল অফিসিয়াল ট্যুরে কোথাও বিশেষত বিদেশে যাওয়ার মাঝে কৃতিত্বের কি আছে? পর্যাপ্ত পয়সা আয় করতে পারলে তো নিজে খরচ করেই বিদেশে এর চেয়ে অনেক বেশি ট্যুর দেওয়া যায়। উত্তরে বলেছিলাম, এটা অন্য ধরণের লোভ ভাই। বিদেশের মাটিতে পা রেখে নিজের দেশের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের অর্জনের কথা বিশ্ববাসীকে বলার লোভ, অন্য মাত্রার লোভ। এই লোভ সবাই অর্জন করতে পারে না।
পাবলিক হেলথও তেমনই একটা লোভের যায়গা, যেখানে বিশাল এক সমুদ্রকে পাখির দৃষ্টিতে দেখার লোভ আছে, বাথটাবের বদ্ধ জলের বদলে মুক্ত সরোবরে সাতরানোর লোভ আছে।
আপনি যদি তেমন লোভী হন, পাবলিক হেলথই আপনার উপযুক্ত জায়গা, অন্যথায় নিজে হতাশ হবেন না, বিজ্ঞানকেও হতাশ করবেন না।